
বাসাইলসংবাদ: শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮:

এনায়েত করিম বিজয় ॥
সারাদেশের মানুষ যখন সবকিছু ভুলে মেতে উঠেছে বর্ষবরণের আনন্দ উল্লাসে। ঠিক এমনই উৎসব মূখর দিনে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ শাজাহান তারুণ্যদীপ্ত মনোবল নিয়ে টাঙ্গাইলে রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে দৌড়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। মির্জা শাজাহানও তো পারতেন সবার মতোই আনন্দ উল্লাসে সময় কাটাতে। কিন্তু তিনি ভুলতে পারেননি রূপার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
তিনি রূপা হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে টাঙ্গাইল আদালত চত্বরসহ পৌর এলাকায় আজ ১৪ এপ্রিল সকালে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক দৌড়ালেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকা আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণের পর হত্যার খবরে চমকে উঠেন শাহজাহান। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই জঘন্য ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে দৌড়ে জনমত সৃষ্টি করবেন।
মধুপুর থানায় মামলার পর আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে দৌড় শুরু করেন শাহজাহান। এরপর প্রতি বুধবার আদালত এলাকা থেকে শুরু করে রূপা হত্যার বিচার সম্বলিত ফেসটুন নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দৌড়ান তিনি। কখনো দৌড়ে কখনো বাই-সাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান। স্থানীয়রাও তার সাথে সহমত প্রকাশ করেন। ঘটনার পর মাত্র ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে মির্জা শাহজাহান । এতেও তাঁর দৌড় থামেনি। এ রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দৌড়াবেন বলেও জানান তিনি । টাঙ্গাইল ছাড়াও তিনি হাইকোর্ট এলাকায় মাসে দুইবার দৌড়ান।
মির্জা শাহজাহান দ্রুত রায় কার্যকর করতে সরকারের কাছে জোর দাবী জানান। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে ধুমপানের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে দৌড়ে যাচ্ছেন। আমৃত্যু এধরণের কর্মসূচী চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি। মির্জা শাহজাহান বাসাইল উপজেলার একঢালা গ্রামের মৃত মির্জা হানিফ উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল শহরের থানাপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে জাকিয়া সুলতানা রূপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে পরিবহণ শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রূপা হত্যা মামলায় পাঁচ আসামীর মধ্যে ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫), জাহাঙ্গীর (১৯), চালক হাবিবুর (৪৫) কে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অপর আসামী ওই পরিবহনের সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫)কে সাত বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া । সেই সাথে সফর আলীকে এক লক্ষ টাকা অর্থন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সে অর্থ নিহত রূপার পরিবারকে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও অপরাধ সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ছোঁয়া পরিবহন ( ঢাকা-মেট্রো-ব -১৪-৩৯৬৩) বাসটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতের পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাসাইলসংবাদ/একে