
ফুটন্ত পানির সেঁক, গরম ব্লেড ও পিটিয়ে নির্যাতন ॥

বাসাইল সংবাদ: সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭:
এনায়েত করিম বিজয় :
অভাব-অনটনকে জয় করতে প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান বাসাইলের হযরত আলী (৩২) ও সখীপুরের শাভলু মিয়া (৩৫)। কিন্তু বিধিবাম-সেখানে গিয়ে পড়েন প্রতারকচক্রের খপ্পরে। শরীরে ফুটন্ত পানির সেঁক, গরম ব্লেড দিয়ে শরীর কর্তন ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তাদের পরিবারকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে তারা। টাকা না দিলে লাশ ফিরবে বাংলাদেশে এ রকমও হুমকি দেয়া হচ্ছে ফোনে। বিভিন্ন সময় টাকা চেয়ে ইমুতে ম্যাসেজ দেয়াও হচ্ছে- ‘বুঝলাম তোমরা টাকা দিবা, তা কবে? মারা যাওয়ার পড়ে?’ দুইজনকে দুই জায়গায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করছেন বলে পরিবারটির অভিযোগ। র্যাব অভিযোগ পাওয়ার পর আলম নামের একজন আদম ব্যবসায়ীকে গত ৭ মে গ্রেফতার করেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দালালরা তাদেরকে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা কিন্তু মালয়েশিয়াতে না অন্য কোন দেশে নেয়া হয়েছে বিষয়টি জানে না তাদের পরিবার। এদিকে অজ্ঞাত প্রতারকচক্র ফোনে ইন্দোনেশিয়ায় আটকের বিষয়টি জানান তাদেরকে।
পরিবারের অভিযোগ- জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দালালদের যোগসাজস রয়েছে। তা না হলে বাকি টাকা পাওয়ার পর তাদের ছাড়া হবে এমন কথা কেন বলল।
জানা যায়, সখীপুর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামের মিজান মিয়া ও বাসাইল উপজেলার সুন্না গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আলম মিয়া মালয়েশিয়া নেয়ার জন্য হযরত আলীর কাছে থেকে নগদ সাড়ে ৩ লাখ ও শাভলুর কাছে থেকে সাড়ে ৩ লাখ শর্তে নগদ দেড় লাখ টাকা নেয়। হযরত আলী বাসাইল উপজেলার সুন্না গ্রামের আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে। শাভলু সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীসেও গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের দু’জনকে মালয়েশিয়া নেয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের করে নেওয়া হয়। বিমানবন্দরে গিয়ে হযরত আলী পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলে কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান ছাড়বে, তোমরা ভাল থেকো। প্রায় ১৫দিন পর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বলে হযরত আলী জেলে রয়েছে। একই কায়দায় শাভলুর পরিবারের কাছে জেলহাজতে থাকার কথা বলে টাকা দাবি করেন। এরপর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দালালকে অবহিত করলে দালালরা হযরতকে বের করতে ৮০হাজার টাকা দাবি করে। দালালরা বাকি থাকা টাকা দাবি করে শাভলুর কাছে । শাভলুর পরিবার ঋণ করে বাকি টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পাওয়ার পরেও দালাল মিজান ও আলম শাভলুকে ছেড়ে দেয়নি। দালালরা শাভলু ও হযরতকে ছেড়ে দেয়ার কয়েকটি তারিখও দেয়। কিন্তু তারপরও ছেড়ে দিচ্ছে না তাদের। দালালরা শাভলুকে ছেড়ে দেয়ার বিভিন্ন তারিখ দেয়ার কারণে তার পরিবার এখনো পুলিশের দ্বারস্থ হয়নি। কিন্তু হযরতের পরিবার বাসাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি ও টাঙ্গাইল র্যাব অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছে।
হযরত আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী দালালের মাধ্যমে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া যায়। যাওয়ার পর আর কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না। পরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে আটকের বিষয়টি জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। আমার স্বামীর উপর অমানুষিক নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে একটি একাউন্ট নাম্বার দেয় মাসুদ রানা (+৬২৭৬৫৯১০৯৪)। তারা বলে-মাসুদ রানার বাড়ি যশোরে। তার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বার ০১৮৮৪৫২৩৩৭৯। টাকা পাঠিয়ে এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন। এখনো আমরা টাকা দিতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা পাবো কোথায়। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার স্বামী সেও এখন একটি চক্রের কাছে জিম্মি। কি করে তাকে উদ্ধার করবো।
শাভলুর স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, আদম ব্যবসায়ী মিজান আমার স্বামীকে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকার শর্তে নগদ দেড় লাখ ও মালয়েশিয়া যাওয়ার পরে বাকি টাকা পরিশোধ করবো এই শর্তে মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু সেখানে নিয়ে জিম্মি করে নানা রকম অত্যাচার শুরু করে। এই খবর জানার পর আদম ব্যবসায়ীদের কাছে এই বিষয়টি বললে তারা বলে বাকি টাকা দাও আমরা শাভলুকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে বাকি ২ লাখ টাকার সাথে আরো অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা দেই তার পরেও তারা আমার স্বামীকে ছেড়ে দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদম ব্যবসায়ী মিজানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন