
বাসাইল সংবাদ : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭:

নিজস্ব প্রতিবেদক:
টাঙ্গাইলের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও বাসাইল উপজেলায় অবনতি ঘটেছে। গত ১৬ আগস্ট তারাকান্দি-ভূয়াপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ এবং বাসাইল ছোঁয়ে প্রবাহিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের নওগাঁ-জশিহাটি ঝিনাই নদীর বেরিবাধ ভেঙ্গে বাসাইলের ৬টি ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এতে পানির প্রবল চাপে উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের আইসড়া দোহার, হাকিমপুর, একঢালা, জশিহাটি, ময়থা, নেধার, তিরঞ্চ, ফুলকী, করটিয়াপাড়া, বালিয়া, খাটড়াসহ উপজেলার ৭০টিরও বেশি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
পানিবন্দি মানুষগুলো অসহায় অবস্থায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও নেই কোন সরকারী বেসরকারী ত্রাণ তৎপড়তা। এসব এলাকায় বোনা ও রোপা আমন-আউশ ধানের ক্ষেত, বীজতলা ও সবজিসহ পানিতে নিমজ্জতি হয়ে কৃষিখাতে চরম ক্ষতি সাধন হয়েছে। অপুরণীয় ক্ষতি সাধন হয়েছে মৎস খাতেও। মৎস অফিসের তথ্য অনুযায়ী ১শ ৫০টি পুকুরের ২০ মেট্রিক টন ছোটবড় মাছ, পোনা ও অবকাঠামোসহ প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বন্যার বাধ ভাঙ্গা প্রবল পানির ¯্রােতে ফুলকি ইউনিয়নের আইসড়া, একঢালা,জশিহাটি তিরঞ্চ ফুলকি ও ময়াথা এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক গুলোর অধিকাংশ স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে বিশাল খাদের সৃিস্ট হয়েছে।
ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার প্রায় সব ক’টি প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় বা কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাদান কর্মসূচী। এ ছাড়াও উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে সৈদামপুর, রাশড়া, পৌলী, যৌতুকী, তারাবাড়ি, কর্মকারপাড়া, কাজিরাপাড়া, আদাজান, সিংগারডাকসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার, কাশিল ইউনিয়নের বাঘিল-ফুলবাড়ি, পিচুড়ী, স্থলবল্লা, বাহাতৈর, কাশিল দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়াসহ প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ২হাজার ৫শ পরিবার, কাউলজানী ইউনিয়নের ৩ হাজার, হাবলা ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার, বাসাইল সদর ইউনিয়নে প্রায় ১হাজার, বাসাইল পৌরসভার মাইজখাড়া, বর্ণীকিশোরী, বালিনা, বাসাইল দক্ষিণপাড়া, সিংবাড়ী, বাসাইল পালপাড়া ও মাঝিবাড়িসহ এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানিবন্দি মানুষগুলোর সাহায্যার্থে সরকারি-বেরসরকারী পর্যায়ে এখনো কোন ত্রাণ পৌছায়নি বলে জানিয়েছে বন্যার্তরা। এদিকে বন্যার প্রভাবে বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্য, গো-খাদ্যসহ শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমার এলাকায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙ্গে গিয়েছে। বন্যার্ত মানুষেরা সরকারি-বেরসরকারী পর্যায়ে এখনো কোন ত্রাণ পাননি। বন্যার্তদেরকে সরকারি ত্রাণ বরাদ্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা মৎস অফিস জানান মৎস খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কোন বরাদ্ধ পেলে মৎসচাষীদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, কৃষিখাতে ক্ষতির পরিমান নির্নয় করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারী কোন সাহায্য আসলে তা তাৎক্ষণিক কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুছ ছাত্তার জানান, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি এখনও পরিমাপ করা যায়নি, পানি কমলে পরিমাপ করে সংস্কারের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হবে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়মা আক্তার জানান, বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণসহ অন্যান্য সাহায্যের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আশা করি দ্রুতই তাদের মাঝে ত্রাণ পৌছাতে পারবো।
এ ব্যাপারে বাসাইল-সখীপুরের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয় জানান, পানিবন্দি এলাকা ফুলকিসহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি। অতিদ্রুতই বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন