
বাসাইল সংবাদ: মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭:

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিয়ের দাবিতে প্রেমিক শাকিল রানা সচিবের বাড়িতে নয় দিন ধরে অনশন করছে কলেজ ছাত্রী পারুল আক্তার (২৩)। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে সব লুটে নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রেমিকা পারুলকে বাড়ি থেকে বের করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন পারুল ও তার পরিবার। এদিকে বাসাইল থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন পারুল।
পারুল সখীপুর উপজেলার হতেয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স শেষ পর্বের ছাত্রী। তার দাবি প্রায় আড়াই বছর ধরে অভিযুক্ত শাকিল রানা সচিবের সাথে তার ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শাকিল তার সাথে দৈহিক মেলামেশা করলেও শেষ পর্যন্ত শাকিল তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় গত ৮ মে সকালে তার বাড়িতে অবস্থান নিতে বাধ্য হয় বলে পারুল জানান। ১৬ মে এখনো ওই বাড়িতেই অবস্থান করছে মেয়েটি। ওইদিন শাকিলের বাড়িতে আসলে শাকিল ও তার পরিবারের সদস্যরা কৌশলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেন পারুল।
অভিযুক্ত শাকিল বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়ার এমডি মাসুদ রানা মান্নানের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের একজন সদস্য। সে গত ইউপি নির্বাচনে ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, বিষয়টি মিমাংসার জন্য কয়েকবার দু’পক্ষের অভিভাবকদের ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পারুলের লোকজন উপস্থিত থাকলেও শাকিল ও তার পক্ষের লোকজন উপস্থিত না হওয়ায় এ ঘটনার কোন শুরাহা করা যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, সময় মতো না খেয়ে মেয়েটি গত ১৪ মে বিকেলে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে, পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর মেয়েটি সুস্থ হয়। মেয়েটির সাথে যদি শাকিল প্রেমই না করতেন তাহলে মেয়েটি এ বাড়িতে আসবে কেন? এই মুহুর্তে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না করলে ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
এ ব্যাপারে অনশনরত তরুণী পারুল বলেন, এ বাড়িতে আসার আগেও শাকিলের জন্য নিজেকে শেষ করার চেষ্টা করেছিলাম। শাকিল আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সবকিছু লুটে নিয়েছে, সে আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত আমি ওর জন্য অপেক্ষা করেই যাবো এবং এ বাড়ি থেকে বের হবো না। পারুল আরও জানায়, বাসাইল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। টাঙ্গাইল কোর্টে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অভিযুক্ত শাকিলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে পারুলকে বিয়ে না করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে মাত্র তিন মাস আগে পারুলের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, প্রেমের মতো কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি, আমাকে ফাঁসানোর জন্য কোন একটি চক্র মেয়েটিকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের উপজেলা শাখার সভাপতি ওহিদুল ইসলাম মোস্তফা বলেন, ১৪ মে বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে শাকিল ও পারুলের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি, শুধু অনশন নেয়া পারুলকে পেয়েছিলাম। পারুলকে আইনের সহায়তা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন উপজেলা মানবাধিকার কমিশন নারি অধিকার রক্ষায় তার পাশে থাকবে।
উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রাশেদা সুলতানা রুবি বলেন, ৯ দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন এ ঘটনার কোন শুরাহা করতে পারেনি। দ্রুত এ ঘটনার সমাধান করে দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাফিসা আক্তার বলেন আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মেয়েটিকে আইনের সহায়তা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ নিয়ে আসলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন