
টাঙ্গাইল- ৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার পর্ব-৪

বাসাইল সংবাদ: রোববার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭:
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাসাইল-সখীপুর আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম আসাদুল হক তালুকদার। তিনি বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের টেঙ্গুরিয়া পাড়া গ্রামে তালুকদার বংশের এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৬ সালের ২ এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন। ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম আসাদুল হক তালুকদার শৈশব ময়মনসিংহ শহরে কাটলেও নিজ গ্রামের মাটি ও মানুষের সাথে সবসময়ই ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তিনি টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে এই স্কুল থেকেই প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৬৪ সালে করটিয়া সাদত কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ১৯৬৬ সালে বিএসসি পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকেই স্কাউটিং, কচি-কাঁচার আসর, বিতর্ক, আবৃত্তি সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। তার সুবাদে তখন থেকেই হয়ে ওঠেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ-সকলের প্রিয়মুখ। আর সেসময়ই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি।
তিনি টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ন-আহবায়কের দ্বায়িত্ব¡ পালন করেন। ১৯৬৫ সালে করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদে বিতর্ক সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন এবং দ্বায়িত্ব¡ পালন করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছিলেন বহু পুরস্কার বিজয়ী তুখোড় বিতার্কিক। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেসময় তিনি ঢাকাস্থ টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদে সহ-সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার’স এসোসিয়েশনে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং দ্বায়িত্ব¡ পালন করেন। ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদ নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, এগার দফা, ছয় দফা-সহ আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ বাসাইলের হাবলা-টেঙ্গুরিয়া পাড়া মাঠে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইলে স্বাধীনতা আন্দোলনকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল হুমায়ুন খালিদ, ফজলুর রহমান ফারুক, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, খন্দকার আব্দুল বাতেন, সাদত কলেজের সাবেক ভিপি এডভোকেট সোহরাওয়ার্দী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তিনি ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
১৯৯২ সালে সিনিয়র সার্ভিস পুলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনে উপ-সচিব হিসেবে যোগদান করেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দ্বায়িত্ব¡ পালনের পর ২০০১ সালে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন তিনি। এই পদে থাকাকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশের গরীব ও অবহেলিত তাঁতি সমাজের উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহন করে বিভিন্ন মহলে সমাদৃত হয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহন করেন।
কর্মজীবনে তিনি দক্ষ প্রশাসক ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি সেসময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং সেসময় তিনি ঢাকাস্থ বাসাইল উপজেলা কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দ্বিায়িত্বও পালন করেন। অবসর গ্রহনের পর তিনি পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সেসময় তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল ৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এছাড়াও তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একজন ফেলো।
তিনি টাঙ্গাইলস্থ হাবলা ইউনিয়ন কল্যাণ সমিতি-র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম আসাদুল হক তালুকদার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল ৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন পেলে জয়লাভের প্রশ্নে তিনি আত্মবিশ্বাসী। সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে জাতীয় সংসদে বাসাইল-সখিপুরের জনগণের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মনোনয়ন এবং নির্বাচনে বিজয়ী হলে বাসাইল-সখীপুরের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে তার সাথে বাসাইল সংবাদ টুয়েন্টিফোর ডটকমের একান্ত আলাপচারিতা সরাসরি তুলে ধরা হলো।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও এলাকার সার্বিক উন্নয়নে একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তাঁর বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে । বাসাইল-সখিপুরের জনগণের দোরগোড়ায় উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগসমূহ, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও, বেসরকারি খাতসহ সকলের সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরী বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও বাসাইল-সখিপুরেই উন্নত রোগনির্ণয় সেবা, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। উপজেলা হেলথ্ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা, পর্যাপ্ত ঔষধ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার এবং দক্ষ সহায়ক জনবল (প্যারামেডিক, নার্স ও ধাত্রী) নিয়োগ করা প্রয়োজন। কার্যকর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করাও জরুরী।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাসাইল-সখিপুরের প্রত্যেকটি গ্রামের সন্তানদের মানসম্পন্ন শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবী বলে তিনি মনে করেন। শিক্ষার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করার কোন বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কর্মমূখী কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটানোও জরুরী।
উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে দক্ষ ও উন্নত সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বাসাইল ও সখিপুরকে জাতীয় মহাসড়কে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। উপজেলা সদরের সাথে ইউনিয়নগুলোর সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নসহ বাসাইল-সখিপুরের প্রত্যেকটি গ্রামকে সড়ক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে গুরুত্বের ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ এবং সংস্কার করা হলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এর পাশাপাশি সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোর জনবান্ধব উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে।
বাসাইল-সখিপুরকে একটি সুখি ও নিরাপদ সামাজিক মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে স্থিতিশীল জনজীবন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা অত্যন্ত জরুরী বলে তিনি মনে করেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে সন্ত্রাস, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল করতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষায় পারষ্পরিক আস্থা অর্জন এবং রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাস, অরাজকতা ও আইন-শৃংখলা বিরোধী তৎপরতা এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পারিবারিক জীবন: স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে তাঁর সুখী পরিবার। সহধর্মীনি ড. তালুকদার নুরুন্নাহার একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রাণীসম্পদ বিজ্ঞানী। তিনি বাংলাদেশ প্রাণীসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)-এর মহাপরিচালক এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান। এছাড়াও তিনি সার্ক ডেইরি বাফেলো ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে বাংলাদেশের ফোকাল হেড হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এ পর্যন্ত তাঁর শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি। এই দম্পতির জেষ্ঠ্য কন্যা কৃষিবিদ নিঝুম কাইয়ুম তালুকদার বিসিএস ৩০ তম ব্যাচে একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। জেষ্ঠ্য পুত্র ডা: অর্নব কাইউম তালুকদার পেশায় একজন চিকিৎসক। কনিষ্ঠা কন্যা কৃষিবিদ তিতলী কাইয়ুম তালুকদার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি স্নাতকোত্তর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। কনিষ্ঠ পুত্র সরিৎ কাইয়ুম তালুকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মতিহার হল শাখার সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে মাস্টার্স করছেন।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন