নিজস্ব প্রতিবেদক : যানজটের নগরী ঢাকা। চাইলেও সব সময় পরিবার নিয়ে ঘুরে দেখা হয়না এই নগরী। এখন ঈদের ছুটি চলছে। ঢাকা এখন ফাঁকা। তাই এখনই সুযোগ। যানজটহীন মোগল আমলের প্রাচীন শহরের পুরোনো অলিগলি ঘুরে দেখার জন্য ঈদের ছুটির তুলনা নেই। ঈদের ছুটিতে চেনা শহরকে অন্যভাবে ঘুরে দেখার তাই এখনই সময়। ছুটিতে সুনসান ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।
ঈদে যারা ঢাকায় রয়েছেন তারা ঘোড়ায় টানা টমটম গাড়িতে চেপে নিজের শহরকে অন্যভাবে উপভোগ করতে পারেন। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী টমটম গাড়ির জুড়ি মেলা ভার। টমটমে চড়ে নিজের শহরকে নতুনভাবে উপভোগ করতে করতে আপনি হয়তো এই অতি-মেট্রো শহরের ইট-কংক্রিট-ইস্পাতের ভেতর থেকেই শুনতে পাবেন ইতিহাসের কথামালা।
আর যদি কেউ টমটমে করে পুরো শহর ঘুরে দেখতে চান, তারও ব্যবস্থা রয়েছে। গুলিস্তান, পল্টন, ওয়ারী, সদরঘাট কিংবা সংসদ ভবন এলাকায় ঘোড়ায় টানা যেসব টমটম গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়, এসব এলাকা থেকে ঘন্টায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে টমটম গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। গঠনবৈচিত্র্যে নানা ধরনের টমটম গাড়ি আছে। সাধারণত পেছনে ৪ আসনসহ ২টি ঘোড়ায় টানা এই গাড়ির চারপাশ খোলা থাকে।
ছুটির হাওয়ায় আপনি টমটমে করে ঘুরতে পারেন টিকাটুলীতে, সদরঘাটে, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার থেকে শাহবাগ, টিএসসি, রবীন্দ্রসরোবর, এমনকি ঘোড়া ছুটিয়ে দিতে পারেন বিজয় সরণি হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকেও।
সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন পুরান ঢাকার পুরোনো বাড়িঘর, দালানকোঠা থেকে আহসান মঞ্জিল। আরও আছে বড় কাটরা, ছোট কাটরায়, লালবাগের কেল্লা, কিংবা হোসেনি দালান। বুড়িগঙ্গাকে পাশে রেখে ছুটতে পারেন তারা মসজিদ কিংবা সাতগম্বুজ মসজিদের দিকে।
জানা যায়, আর্মেনীয়রা আঠারো শতকের শেষের দিকে ও উনিশ শতকের গোড়ায় শাঁখারীবাজারে সিরকো অ্যান্ড সন্স নামে একটি দোকান তৈরি করে। ওই দোকানে বিভিন্ন ইউরোপীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি হতো। এই সিরকো প্রথম ঘোড়ায় টানা গাড়ি তৈরি করে। তখন ঢাকায় এই গাড়ির নাম ছিল ‘ঠিকা গাড়ি’। পরে ব্রিটিশরা এই যানবাহনকেই শহরের মুখ্য যানবাহনে পরিণত করে।
আর্মেনীয় ও ব্রিটিশদের হাত ধরে এই টমটম গাড়িই ছিল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন। পাকিস্তান আমলেও টমটম গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রচুর। কিন্তু এখন প্রায় হেরিটেজ এই ঐতিহ্যশালী পরিবহনব্যবস্থা। তবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এখনো সাধারণ মানুষের জন্য টমটম গাড়ি চলাচল করে। বিশ থেকে ত্রিশ টাকার বিনিময়ে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যে কেউ টমটমে চড়ে যাতায়াত করতে পারেন। যদিও রাজশাহী, দিনাজপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, যশোর অঞ্চলের শহর ও গ্রামে এখনো মাঝেমধ্যে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করা হয়।
যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে নিজস্ব জৌলুশ হারাচ্ছে টমটম গাড়ি। টমটমের সাথে সংশ্লিষ্টদের দাবি সদরঘাট-গুলিস্তান রোডে আগে শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি চললেও এখন মাত্র ২৫-৩০টি গাড়ি চলাচল করছে। আগের তুলনায় এখন পরিবহন বেশি হওয়ায় এবং রাস্তায় মাত্রাতিরিক্ত যানজট থাকায় যাত্রীরা ঘোড়ার গাড়িতে কম চড়েন। আবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে প্রতিটি ঘোড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার খরচও বেড়ে গেছে। এতে করে কম আয়ের বিপরীতে বেশি হচ্ছে খরচ। আগে প্রতিদিন ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হলেও এখন ১০০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। প্রতিদিন মালিকের জমার টাকা উঠাতেই হিমশিম খেতে হয় বলে দাবি কোচোয়ান ও হেল্পারদের।
সূত্র- দৈনিক আমাদের সময়
বাসাইলসংবাদ, ২৩ এপ্রিল, ২০২৩ / একেবি
সকলের অবগতির জন্য নিউজটি শেয়ার করুন