বাসাইল সংবাদ ডেস্ক:
ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারই যা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে থাকল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে পাওয়া ক’দিনে টাইগারদের কাজটা ওখানেই সম্ভবত করতে হবে। এই একটা কাঁটা না থাকলে বলা যেত আফগানিস্তানের বিপক্ষে তো এভাবেই জেতা উচিৎ বাংলাদেশের! এক পেশে খেলা খেলে। শনিবার মিরপুরে শেষ ওয়ানডেতে আফগানদের ১৪১ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ এ জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ৭ নম্বর জায়গাটি ধরে রাখল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
একটি জয় কতোই না বড়! এটি ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের শততম জয়। এই জয়ে টানা পঞ্চম সিরিজ জয় হল টাইগারদের। আগে যা কখনোই ঘটেনি। টানা সিরিজ জয়ের রেকর্ডের পাতায় শ্রীলঙ্কাকে টপকে গেছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি ও সাব্বির রহমানের ফিফটির পর বোলারদের চমৎকার বোলিং এই ম্যাচে সহজ করে দিয়েছে সব কিছু। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৭৯ রান করেছিল টাইগাররা। আফগানরা টিকতে পেরেছে ৩৩.৫ ওভার। অল আউট হয়েছে ১৩৮ রানে।
দ্বিতীয় ওয়ানডেটা বাংলাদেশ অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরেছে। সে কারণেই হয়তো সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের জয়টা আরো মধুর হয়ে থাকল। তবে মাশরাফি এদিন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। কোনো রান না দিয়েই উইকেট নিয়েছিলেন নিজের সপ্তম বলে, নতুন বলেই। কিন্তু পরের ডেলিভারিতে পড়ে গেলেন। বেশ খানিক্ষণ লাগল চিকিৎসা নিয়ে বোলিংয়ে ফিরতে। মিরপুর স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ল এক আবেগী দর্শক মাঠে ঢুকে পড়ে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরায়। টাইগার অধিনায়ক বিষয়টা সামলেছেন খুব ভালো ভাবে। সমর্থকও কষ্ট পাননি।
২৮০ রানের টার্গেটে নেমেছিল আফগানরা। মাশরাফি প্রথম ওভারটি দিলেন মেডেন। পরের ওভারের প্রথম বলে বিপজ্জনক মোহাম্মদ শাহজাদকে (০) বোল্ড করলেন। এরপর ৪৭ রানের জুটি হলো। ৩৪ বছরের মোশাররফ ভেলকি দেখালেন। বাঁ হাতি স্পিনার আট বছর পর ফিরেই নিজের তৃতীয় ওভারে দুই উইকেট নিয়েছেন। এরপর সাকিব আল হাসানের দারুণ থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরেছেন আফগান অধিনায়ক আসগর স্তানিকজাই (১)।
৫৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে আফগানরা। সেই চাপকে কিছুক্ষণ পর বিপদে রূপ দেন তরুণ ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। টানা দুই ওভারে সামিউল্লা শেনওয়ারি (১৩) ও রহমত শাহকে (৩৬) তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে নতুন করে শুরু করতে বাধ্য করেছেন। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবিকে (৩) মোশাররফ করেছেন তার তৃতীয় শিকার। ৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট নেই। ৮৯ রানে ৭ উইকেট হারানো আফগানদের আর ফেরার উপায় থাকেনি। তবু লড়েছে বড় হার এড়াতে। পারেনি। মোশাররফ ৩, তাসকিন ২, মাশরাফি, মোসাদ্দেক ও শফিউল ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা তামিমময়। সাথে আছে সাব্বির রহমানের প্রথমবার তিনে খেলে সাফল্য তুলে নেওয়ার গল্প। সৌম্য সরকার (১১) বাজে শটে বিদায় নিলেন। এরপর এই সিরিজের সর্বোচ্চ ১৪০ রানের জুটি গড়েন তামিম ও সাব্বির। সাব্বির ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি করলেন। ফিরে গেলেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে।
তামিম থামেননি ফিফটি করে। বন্ধু সাকিব আল হাসানের (১৭) সাথে ৪৯ রানের জুটি গড়েছেন। সাকিবের ৬ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে একক ভাবে হয়ে গেছেন ওয়ানডেতে দেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান। ১১০ বলে সেঞ্চুরির পর তামিম শুধু মারতে চেয়েছেন। ১১৮ বলে ১১৮ রান করে ফিরেছেন। ১১টি চার ও ২টি ছক্কা মেরেছেন।
আফগানরা খেলেছে চার স্পিনার নিয়ে। কিন্তু তামিমের বিদায়ের ক্ষণ ৩৯তম ওভার পর্যন্ত তাদের খুব বিপজ্জনক লাগেনি। শেষ ১০ ওভারে স্লগ করার কথা। কিন্তু তখন স্পিনারদের খেলতে গিয়ে টপাটপ উইকেট পড়ে স্বাগতিকদের। এই সময়ে ৬৪ রান আসে ৫ উইকেটের বদলে। মাহমুদ উল্লাহ ছয়ে নেমে ২২ বলে অপরাজিত ৩২ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেছেন।
আসলে তামিম যখন ফেরেন তখনো তিনশ রানকে নাগালে লেগেছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেই শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কি যে হল! শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও অমনটা ঘটলে ফিরে আসার উপায় থাকবে কি!