
বাসাইল সংবাদ : শুক্রবার,২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

এনায়েত করিম বিজয়:
সাপের কামড়ে আহত অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার শিমু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন- টাঙ্গাইলের কোথাও কি সাপের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। স্ট্যাটাস দিয়ে বিষের যন্ত্রনায় তিনি ফেসবুক থেকে বের হয়ে যান। যতক্ষণে ফেসবুক কমেন্টে অনেকেই দিয়েছেন ভ্যাকসিনের সন্ধ্যান ।
কিন্তু এখন আর ভ্যাকসিন কোন কাজেই লাগলো না তার। বিষের যন্ত্রনায় ছটফট করে ততক্ষণে তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। তার অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠী ও পরিবার।
তার স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। স্বপ্নও পূরণের পথে। এই মুহুর্তে তার চলে যাওয়াটা পরিবারের জন্য অতি কষ্টের বিষয়। প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের গর্ব হবার আগে বিয়ের পিড়িতেও বসবেন না এমন চিন্তা ছিল তার। এমন স্বপ্নটাও পূরণ হলো না।
তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় ব্যাচের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিসিএস ক্যাডারশীপের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ৩৬ তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় চমৎকার পারফর্ম দিয়ে আসা এবং ৩৭ তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার গৌরব অর্জন করে আসা আয়েশা আক্তার শিমু মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন।
তিনি নিজ এলাকাতেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সব সময় শিশুদের সাথে মিশতেন। শিশুরাও তাকে সব শিক্ষকের চেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। শিশুরা তাকে শিমু মিস বলেই ডাকতেন । শিশুরা তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন।
তারও জানা ছিল না টাঙ্গাইলের কোথাও সাপে কাটা ভ্যাকসিন পাওয়া যায় কি না। হয়তো টাঙ্গাইলের কোথাও ভ্যাকসিন নেই, থাকলে তো সবার জানার কথা, অন্তত সচেতন মানুষের। সাপে কাটা ভ্যাকসিনের কারনে আজ আমরা একজন সম্ভাব্য বিসিএস ক্যাডারকে হারালাম। ভ্যাকসিন থাকলে হয়তো আমরা তাকে হারাতাম না।
জানা যায়, আয়েশা আক্তার শিমু (২৭) বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের নুরু মিয়া মেয়ে। শিমুকে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৮টার দিকে একটি বিষধর সাপে কামড় দেয়। শিমুর বাড়ির চারদিনে বর্ষার পানি থাকায় তাকে নৌকা যোগে বাড়ি থেকে বের করে রাস্তার ধারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাড়িতে করে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাপপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই।
তার পর রাত একটায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে আদরের মেয়েটি আর নেই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় বাড়িতে আনা হয়। অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না তার পরিবার। সাপে কাটা মানুষ নাকি কয়েকদিন বেঁচে থাকে এমন খবরে ওইদিনই বৃহস্পতিবার আবার শিমুকে দুইটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করে।
নিহত শিমুর বাবা নুরু মিয়া ক্ষোভের সাথে বলেন, শিমুকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক জানায় সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই। আজ ওই হাসপাতালে ভ্যাকসিন থাকলে তাদের শিমুর মৃত্যু হতো না। শিমুর মতো ভ্যাকসিনের অভাবে আর যেনো কারো মৃত্যু হয় না।
মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে সাপে কাটা ভ্যাকসিন আছে কি নাই সে ব্যাপারে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেনি। এব্যাপারে তার কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পুতুল রায় বলেন, সাপের কাটা ভ্যাকসিন সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে থাকে। চাহিদা দেওয়া মাত্রই ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে হয়তো সাপে কাটা রোগিকে বাঁচানো সম্ভব হতো বলে তিনি মনে করেন।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন