
বাসাইল সংবাদ: বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮:

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মফস্বলে শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধি, নৈতিক শিক্ষা অর্জনসহ মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার”। প্রতিনিয়ত ব্যতিক্রমী সব কার্যক্রমে একধাপ এগিয়ে থাকছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশুদের ঝরে পড়া রোধে বিনা বেতন, অর্ধবেতন এমনকি উপবৃত্তিও দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের দেড় যুগ পুর্তি উপলক্ষে ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার ২০১৭ সালকে চ্যালেঞ্জিং ইয়ার হিসেবে নিয়ে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানে যোগ করেছে আরো নতুনত্ব। পড়ালেখার মানের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অুনুষ্ঠানের প্রদর্শণীতে পুরো ২০১৭ সালে ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুল ছিল আলোচিত। উপজেলায় বহুবার প্রমান দিয়েছে ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক দোয়া মাহফিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিথি হয়ে যেতে হয়। কিন্তু ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের অধিকাংশ কার্যক্রম ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল শুনে ও কোমলমতি শিশুদের প্রদর্শণী দেখে মুগ্ধ হন তিনি।
এর আগে প্রতিবছর উপজেলা, জেলা পর্যায় থেকে অতিথিদের আমন্ত্রণ করতো প্রতিষ্ঠানটি। সময়মতো অতিথিরা উপস্থিত হতে না পারায় স্থানীয় অভিভাবকদের অপেক্ষার বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বলে এ বছর থেকে এসব অতিথি আমন্ত্রণ করা বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের শুরুটা হয় বার্ষিক দোয়া মাহফিল দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই উপস্থাপক বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় উপস্থাপনা করেন। প্রতিটি বিষয়ই শিক্ষার্থীরা আরবী বা সংস্কৃত পরে ইংরেজি ও বাংলায় অনুবাদ করে শোনায়। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিশুরা যেন ভুলে না যায় জেন্য ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত পটভুমি প্রদর্শণ করে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। উপস্থিতিরা প্রদর্শণ দেখে অভিভুত হন। ক্রীড়া প্রতিযোগীতা শেষে বিজয়ী ও মেধাবিদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষনীয় প্রদর্শণীতে উপস্থিতিরা মুগ্ধ হন।
পুরস্কার বিতরণেও প্রতিষ্ঠানটি নিয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি সকল ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছা পুরস্কার দেওয়া হয়।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হওয়ায় ১০টি ভালো কাজের সপথ করানো হয় শিক্ষার্থীদের। প্রথমে শিক্ষার্থীদেরকে সকল ভালো কাজে হ্যা বলা শেখানো হয়। এরপর, সদা সত্য বলবো, দুস্থদের পাশে দাড়াবো, নিয়মিত স্কুলে যাওয়া, বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ , গুরজনদের উপদেশ মানবো, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, ধুমপান ও মাদককে না বলাসহ পরীক্ষায় অসাধুপায় অবলম্বন না করার প্রতিশ্রুতি করানো হয়। এসময় ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুল, কোচিং ও কলেজ একাডেমির শিক্ষার্থীদের সাথে সহমত প্রকাশ করে অংশ নেন কয়েকশ অভিভাবকও।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. রেজাউল করিম তার বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দিক তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি হয়েছে সৃজনশীলতার জন্য। বর্তমানে পঞ্চাশ শতাংশ শিক্ষার্থীরা এ+ পাচ্ছে। এটাকে শত ভাগ এ+ নিশ্চিত করতে কাজ করছে একঝাক শিক্ষক-শিক্ষিকা। এসময় তিনি বলেন- উপজেলার শীর্ষ ফলাফলের অধিকাংশ ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার থেকেই হয়েছে। ২০০৭ সালে উপজেলায় স্নাতক বা ফাজিল পরীক্ষায় মাস্টার্সে প্রথম স্টার মার্কস পায় ইমপ্রুভ কলেজ একাডেমীর ছাত্র নুর আলম ও মুস্তাফিজুর রহমান। ২০০৯ সালে উপজেলায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় প্রথম এ+ পায় সাদ্দাম হোসেন। ২০১২ সালে জেএসসিতে উপজেলায় প্রথম এ+ পায় উর্মী সরকার। ২০১৫ সালে কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশন বৃত্তিতে উপজেলায় প্রথম হয় ধ্রব রাজবংশী ও ফাতেমা আক্তার উর্মী, ২০১৭ সালের পাথরাইলে বেসরকারী স্কুল থেকে সরকারি বৃত্তি পায় একমাত্র ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুলের ছাত্রী জেসমিন আক্তার লিলি। এ ফলাফল অব্যহ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষার্থীর পড়ার মান বজায় রাখতে প্রতি নিয়ত হোম ভিজিট, মোবাইল কমোনিকেশন, রাতে পড়ার টেবিলে শিক্ষার্থীরা আছে কি না সেজন্য রাতেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন করে থাকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তিনি আরো বলেন, পাঠ্য বই ও সার্টিফিকেট নির্ভর পড়ালেখা ভাবনা ছেড়ে সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিরোধ গড়ার আহবান জানান তিনি।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন