
বাসাইলসংবাদ: সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮:

এনায়েত করিম বিজয় ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকা আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণের পর ঘাড় মটকে হত্যা মামলায় চার জনের ফাঁসি অপর একজনকে সাত বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া এগারোটার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া এ রায় দেন।
পাঁচ আসামীর মধ্যে ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫), জাহাঙ্গীর (১৯), চালক হাবিবুর (৪৫) কে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অপর আসামী ওই পরিবহনের সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫)কে সাত বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। সেই সাথে সফর আলীকে এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। সে অর্থ নিহত রূপার পরিবারকে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এদিকে অপরাধ সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ছোঁয়া পরিবহন ( ঢাকা-মেট্রো-ব -১৪-৩৯৬৩) বাসটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতের পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর মাত্র ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে নিহতের স্বজনরা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি আসামী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীগণের আইনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া রায়ের এ দিন ধার্য করেছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নাছিমুল আক্তার নাসিম। তার সহায়তায় ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী এস আকবর খান, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এমএ করিম মিয়া ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ।
রাষ্ট্র পক্ষের প্রতিক্রিয়া :
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ ও এস আকবর খান জানান, মাত্র ১৪ কর্মদিবসে এই মামলার রায় একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতো অল্প সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এধরনের মামলার রায় ইতপূর্বে লক্ষ্য করিনি। যারা ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় লিপ্ত তারা এই রায় থেকে শিক্ষা নিবে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আসামী পক্ষের প্রতিক্রিয়া :
আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবি অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিম্ন আদালত আজকে যে রায় দিয়েছে তা আইনের ব্যপ্তয় হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যেসব সাক্ষ্য প্রমান উত্থাপন করেছে সেখানে দোষী প্রমান হয়নি। রূপা ধর্ষণের যে আলামত রাষ্ট্রপক্ষ্য সংগ্রহ করেছে সেখানেও রূপা ধর্ষণ প্রমান হয়নি। এতে আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা এ রায়ে উচ্চ আদালতে ন্যায্য বিচারের দাবীতে আপিল করবো।
রূপার স্বজনদের প্রতিক্রিয়া :
রূপাকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসি ও একজনের সাত বছরের কারাদন্ড হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রূপার স্বজনরা।
নিহত রূপার ভাই হাফিজুর রহমান এতো অল্প সময়ে রূপা হত্যার বিচার পেয়ে আইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, রূপাকে হত্যার সুবিচার পেয়েছি। আমরা আর কোন রূপাকে হারাতে চাই না। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে দেশে নারী জাতি এখন নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছানোর সাহস পাবে। তবে এ রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গতবছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে জাকিয়া সুলতানা রূপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে পরিবহণ শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করেন। গত ১৫ অক্টোবর এ মমলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে ৫ আসামীর বিরূদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্র দাখিলের পর দিন ১৬ অক্টোবর মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলী করা হয়। গত ২৫ অক্টোবর আদালত এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহণের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছে।
বাসাইলসংবাদ/একে