
বাসাইল সংবাদ: সোমবার, ০৬ নভেম্বর, ২০১৭:

॥ এনায়েত করিম বিজয় ॥
‘১২ বছর আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছিলাম, ঘর সংসার করছিলাম এখানেই। কিন্তু সেই ঘরবাড়িও টিকলো না। সব ভেঙে পড়লো খাদে। ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায়ই আমাদের বাড়ির পাশে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। প্রবল বর্ষণের মধ্যে ঘরটি কাঁপতে থাকে। আমরা ঘর থেকে বের হয়ে যাই। কোন আসবাবপত্র বের করার আগেই চোখের সামনেই মাত্র ১০ মিনিটে মধ্যে ঘরসহ ভিটাবাড়ি খাদে পড়ে যায়।
মেজো মেয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ঘর থেকে মেয়ের বইপুস্তকও বের করতে পারিনি। স্বামী সুতারের কাজ করে দিনে যা আনে তাই দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। এহন আমাগো থাকার জায়গাটুকুও রইলো না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভিটাবাড়ি হারানো পলান সূত্রধরের মেয়ে কল্পনা সূত্রধর।
কল্পনা সূত্রধরের বিয়ে হয়েছিল কালিহাতী উপজেলার পৌলি গ্রামে। সেখানে তার স্বামীর মাত্র ১ শতাংশ ভিটেবাড়ি ছিল। ঋণে জর্জরিত ছিলেন তারা। এক পর্যায়ে ওই ভিটেবাড়ি বিক্রি করে কল্পনা সূত্রধর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। বাবা তাকে চার শতাংশ জমি দেন সংসার পাতার জন্য।
জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর বিকেলে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের করাতিপাড়া এলাকায় পলান সূত্রধরের প্রায় ৪শতাংশ বসতঘরসহ ভিটাবাড়ি নিমিষেই ড্রেজারে সৃষ্টি হওয়া খাদে পড়ে যায়। ঘর থেকে কোনো আসবাবপত্র বের করা সম্ভব হয়নি। বিলীন হওয়া বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন প্রায় শত শত লোক এসে ভির করছেন। কেউ কেউ পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তাও করছেন।
ড্রেজার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ার কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, পলান সূত্রধরের বাড়ি ঘেঁসে বীরপুশিয়ার একটি প্রভাবশালী মহল বাংলা ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন করায় সেখানে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। সেই খাদে পড়ে তাদের বাড়িটি বিলীন হয়ে গেছে। কেউ মাটি উত্তোলনের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে মারধরও করেছে এই বালু ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেড় বছর আগে বীরপুশিয়া গ্রামের সানোয়ার হোসেন ওরফে সানু ও একই এলাকার আমিনুর পলান সূত্রধরের বাড়ির পাশেই বাবলু ও সন্তোষ সাহার জমি লিজ নিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। ওই জমিতে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়ে একটি শ্মশানঘাটও ভেঙে যায়। পরে স্থানীয়রা ড্রেজার মালিকদের সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়। সেই দেড় বছর আগে বালু উত্তোলনের ফল আজ পেল এই অসহায় পরিবারটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বাসাইলসংবাদ’কে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অসহায় পরিবারটিকে প্রাথমিকভাবে কিছুদিনের মধ্যেই ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন