
বাসাইল সংবাদ: শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭:

এনায়েত করিম বিজয়:
গত ১৫ মার্চ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাসাইল সংবাদ ২৪.কম এ “অজানা রোগে আক্রান্ত তমার অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত বাবা-মা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর দেশের অনলাইন, স্থানীয় ও জাতীয় প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক গণমাধ্যমে তমার অজ্ঞাত রোগের খবরটি প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। সংবাদটি গুরুত্বের সাথে সরকারি প্রশাসন ও দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি.কম কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে রাইজিংবিডি.কম এর পক্ষ থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর তত্তাবধানে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়। আর্থিকভাবে পুরোপুরি অস্বচ্ছ্বল পরিবারে জন্ম নেয়া তমাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক খরচ বহন করার ইতিবাচক সহযোগিতার ব্যবস্থা করেন বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার। যার সুবাদে চিকিৎসার ব্যবস্থা হল তমার।
আগামী বুধবার ডাক্তার দেখানোর জন্য তমাকে নিয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা রয়েছে। জানা যায়, মুখের বাম পাশে টিউমার আকৃতির মাংসপিণ্ড নিয়ে জন্ম নেয় তমা আক্তার। জন্মের পর স্বাভাবিক গতিতেই বেড়ে উঠে তমা, সাথে সাথে টিউমার আকৃতির মাংসপিণ্ডটিও বড় হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলে তমা। এতদ্বসত্যেও অধম্য মনোবল নিয়ে গত ২০১৭ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। এটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় “রক্তনালী টিউমার” বলে জানা গেছে।
গত ১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি পশ্চিম পাড়ায় তমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হতদরিদ্র কৃষক বাবার একমাত্র সম্বল জরাজীর্ন ছোট্ট ঘরে চোখের জল ফেলছে তমা। তার আক্ষেপ কোন পাপে তার সুশ্রীমুখে এমন অদ্ভুতাকৃতি মাংসপিণ্ড! অন্য দশজন সহপাঠিদের সাথে স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারছেনা তমা। এখন বেশ বড় হয়েছে সে, তার এ মাংসপিণ্ডের কারনে সব সময় মনমরা হয়ে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখে । জীবনের ১৬টি বছর তার কেটেছে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে। বিষাদ নয়নে তার এই চাহনি যেন সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। প্রতিটিদিন যেন শুরু হয় তার জন্য অভিশাপ নিয়ে। বাবা আতাহার আলী ও মা শারমীন বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তমা সবার ছোট।
তমার বাবা-মা জানান, জন্মের পরেই মেয়েটির মুখের বাম পাশে একটি ছোট্ট কালো দাগ দেখা যায়। এরজন্য কিছুদিন হোমিও চিকিৎসা নেয়া হয়েছে। তিন বছর বয়সে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে। সেখানে তিনমাস চিকিৎসা করা হয়। এতেও কোন রকম পরিবর্তন হয়নি। তমার বয়স যখন ৬ বছর তখন হঠাৎ পা পিছলে পরে তার মুখের মাংসপিণ্ডে আঘাত পেয়ে কেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় । এমতাবস্থায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কোন রকমে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠায়। ঐ হাসপাতালে ১৫দিন চিকিৎসা দেয়ার পর চিকিৎসকরা তমার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু এখানেই থেমে যায় তমার সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন। তমার দাদা-দাদীসহ নয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম বাবার সীমিত উপার্জনে দেশের বাইরে চিকিৎসা করার সামর্থ্য হয়নি। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মুখ দেখতে পারেনি তমা। যদি সবার সাহায্য-সহযোগীতায় পাওয়া যায়, তাহলেই হয়তো তমা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তমার উন্নত চিকিৎসার জন্য যত প্রকার সাহায্য-সহযোগীতা করা সম্ভব, আমরা তার সর্বাত্ত্বক চেষ্টা করবো। পাশাপাশি দেশের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী-এনজিওর প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
তমা কান্না বিজরিত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানায়, মাঝে মধ্যে এটা প্রচন্ড ব্যাথা হয়। ঠিকভাবে কথা বলতে কিংবা খেতে পারি না। মুখে এমন মাংসপিণ্ডের বুঝা নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। কারোর সাথে মিশতে পারি না। স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া করবো। কিন্তু আমার মুখে এমন অদ্ভুত মাংসপিণ্ড আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে।
এ রোগের কবল থেকে চিকিৎসা করে সুস্থ করার সামর্থও বাবার নেই। শুনেছি মানুষের সাহায্য নিয়ে আমার মতো কঠিন রোগে আক্রান্তরা সুস্থ হচ্ছে। আমাকেও এ রোগের অভিশাপ থেকে সুস্থ করার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তশালীরা সাহায্যের হাত বাড়াবেন বলে আমার বিশ্বাস।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি তমার অবস্থা দেখে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। আর আশ্বাসের ভিত্তিতেই আগামী ২৩ মার্চ (বুধবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তমার চিকিৎসার জন্য সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নম্বর ০১৭৪৭-২৪৪৯০৬। তমার বাবার এই নম্বরে দেশের যে কোন হৃদয়বান ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য পাঠাতে পারেন। আপনার সহানুভতি ও আর্থিক সাহায্যই পারে তমাকে সুস্থ করে তার স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনতে।
বাসাইল সংবাদ/একে