
বাসাইল সংবাদ : সোমবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৭:

রেজাউল করিম :
“সবাই মিলে লাগাই বৃক্ষ, একদিনেই আড়াই লক্ষ” এই স্লোগান বাস্তবায়িত হয়ে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার এবার হল সবুজের দুয়ার। ৯ অক্টোবরকে সামনে রেখে গত এক মাস ধরে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষার্থে পুরো দেলদুয়ার উপজেলাকে সবুজের চাদরে ঢাকার উদ্যোগ নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসান। সোমবার (৯ অক্টোবর) বেলা ১১টায় উপজেলার পাথরাইলে আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন নামের একটি প্রাইভেট স্কুলে একযোগে আড়াই লক্ষ গাছের চারা লাগানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন কবিরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন জুয়েল, টাঙ্গাইল-৬(দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ খন্দকার আব্দুল বাতেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ, পাথরাইল ইউপি চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ নানা পেশার লোকজন।
এই প্রত্যয়ে প্রত্যেকে কমপক্ষে একটি করে গাছ লাগিয়ে সবুজ দেলদুয়ার গড়ার লক্ষে স্লোগান শুরু হয়েছিল এক মাস আগে। দেলদুয়ার উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ লোকের বাস। প্রত্যেককে অন্তত একটি করে গাছের চাড়া লাগোনোর আহবান জানিয়ে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্নভাবে প্রচারণা শুরু করে।
দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদত হোসেন কবির জানান, বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তণের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে। অনিয়মিত ঋতু পরিবর্তণ হচ্ছে, ঋতুর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তণ হচ্ছে । এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু স্বাভাবিক রাখতে বেশি গাছ থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে সম্প্রতি বেশি হারে বজ্রপাত হচ্ছে। বজ্রপাতরোধে তালবীজ বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তালবীজ রোপনসহ অন্যান্য গাছ মিলিয়ে উপজেলার প্রত্যেককে অন্তত একটি করে গাছ লাগিয়ে উপজেলায় আড়াই লক্ষ গাছ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। রংপুরের তারাগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে বৃক্ষরোপনের কর্মসূচি আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল। যা আজ বাস্তবায়িত হল। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সক্রিয়রা বৃক্ষরোপন অভিযানকে সফল করতে যথেষ্ট প্রচারণা করেছেন। এছাড়া জনপ্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ, হাট, বাজার এসব জায়গায় লিপলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের পরও স্কুল, কলেজ, মসজিদ,মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি মতবিনিময় করেন।
তিনি আরো বলেন, বজ্রপাতরোধে তালবীজকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন সড়কের পাশে ফলজ উদ্ভিদের সাথে শোভাবর্ধণকারী গাছ নীম, জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচুড়া, শিমুল ও মহুয়া গাছের চারা সরকারিভাবে লাগানো হয়েছে। এছাড়া নিজ নিজ বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে ইচ্ছেমতো জায়গায় পছন্দমতো উদ্ভিদের চারা রোপন করেছে সাধারন মানুষ।
পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃক্ষরোপন কর্মসুচি সফল হয়েছে। প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্ব-স্ব এলাকায় গাছের চারা লাগান নিশ্চিত করেছেন। সরকারি চারাগুলো ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে। অন্যদের উৎসাহিত করতে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করে গাছ লাগান নিশ্চিত করেছেন।
পাথরাইল ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, এর আগে বজ্রপাতরোধে আমরা দশ হাজার তালবীজ বিতরণ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের সাথে আরো একহাজার ভিন্ন জাতের চারা রোপন করেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
এর আগেও দেলদুয়ারে বিভিন্ন সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে ব্যতিক্রমী সব পরিকল্পনা করেছেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা। এমনকি রাজশাহীর পবা উপজেলায় এ্যাসিলেন্ট থাকা অবস্থায় ব্যতিক্রমী সব পদক্ষেপে পবা উপজেলার ওই খাতকে তিনি একটি মডেলে পরিনিত করেছিলিলেন। দেলদুয়ার উপজেলাকেও চান একইভাবে সাজাতে। ইতিমধ্যে তিনি ব্যতিক্রম সব উদ্যোগ নিয়ে জনবান্ধব প্রশাসন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাধরাণ মানুষকে কাছে আনতে উন্মক্ত আড্ডা, ঝরে পড়া শিশুদেরকে খুঁজে শিক্ষার পরিবেশ দেওয়া, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শণ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বই বিতরণ করা, ভূমি অফিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খারিজ করতে কত লাগে উন্মক্ত আলোচনা জানিয়ে দিয়ে তিনি উপজেলার সবশ্রেণির মানুষের কাছে এসেছেন।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন