
বাসাইলসংবাদ: মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮:

মাহমুদুল হাসান
রায় হয়েছে বহুল আলোচিত ঢাকা’র আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা রূপা হত্যা মামলার। রায় আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ি হয়েছে। এমন নির্যাতনমূলক হত্যাকান্ডের রায় এমন হওয়ায় বাদী পক্ষসহ সচেতনমহল সকলেই খুশি। চারজনের ফাঁসি ও একজনের ৭ বছরের সাজা হয়েছে।
এটিও কম দুঃখজনক নয় যে গুরুতর অন্যায় ঘটিয়ে দোষিরা তাদের স্ত্রী- সন্তান স্বজনদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে যাচ্ছে। তবে রূপা হারানো স্বজনরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। তারা আইনি প্রক্রিয়ায় দোষিদের শাস্তি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে। যে দিন রূপা ধর্ষণ ও হত্যার শিকারের সংবাদ শুনি সেদিন কষ্ট পাই দেশব্যাপী শত রূপাদের অকালে ঝড়ে যাওয়ার কথা মনে করে। এসব রূপাদের করুণ আর্তনাদের বিচারও হচ্ছে। সব রূপারাই যে ন্যায় বিচার পাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছেনা। তবুও বিচার হচ্ছে সেই ভাল। আবার সব রূপাদের ঘটনা যে প্রকাশ পায় কিংবা মিডিয়ার শিরোনাম হয় তা নয়। তাই ন্যায় বিচার পেতেও ভাগ্যের প্রয়োজন হয়। আমাদের গ্রামগঞ্জের রূপারা শহুরে রূপাদের চেয়ে বেশি ঝুকিতে। অসহায় দরিদ্র পিতার কন্যা ধর্ষিতা হলে তার বিচার নির্ধারিত ১৮০ কার্য দিবসে শেষ না হওয়ার রেকর্ড থাকলেও ধর্ষিতা রূপা হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে মাত্র ১৪ কার্য দিবসের শুনানীতে যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আবার দরিদ্র পিতার কন্যারা ধর্ষিতা হলে তা বড়দের দৌরাত্মে ধামাচাপা পড়ে যায়। দেশের বেশির ভাগ রূপারা গ্রাম মফস্বলের। আবার প্রভাবশালী বাঘ যখন কোন হরিণীর ঘার মটকায় তখন বনের রাজা সিংহও ট্রাইব্যুন্যাল করে হরিণীর ছড়িয়ে থাকা রক্ত দিয়েও চতুর ধনাট্য বাঘকে দোষী প্রমাণ করতে পারেনা। চিন্তা হয় নিজেদের ঘরে থাকা রূপাদের চলার পথটি কত ঝুকিপূর্ণ। রূপারা যেমন অল্প বয়সে সতীত্ব হারিয়ে স্বর্গবাসি হয় তখন সকলের উপলদ্ধি হয় এ বলে যে বেশিরভাগ রূপা বেচে থাকলে তাদের পরিবারের অন্তত ৩/৪ জনের খোড়াকের কর্ণধার হতো। তাই হত্যার পর শুধু রূপাদের নির্মম প্রস্থানই নয় বরং তাদের পরিবারেও অনিশ্চিত কালো ছায়া নেমে আসে। সেজন্য রায় ঘোষনার পর দেশের সকল চিন্তার লোকজন ইতিবাচক অনুভূতি ব্যক্ত করে। আমিও তাদের সাথে একমত। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে আমার একটু ব্যতিক্রম কষ্টও লাগে। নারী দেহের লোভ সামলাতে না পারা প্রতিজন ধর্ষক যখন আইনী প্রক্রিয়ায় যাবজ্জীবন কিংবা মৃতুদন্ডে ঝুলে যায় তাদের স্ত্রী পরিবার ও সন্তানদের কথা আমরা কেউ কি ভাবি। ওখানে একজনের মৃতদেহ গোটা পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে, তারা হারানোর পর সংগত সহানুভূতি ও সহযোগিতা পেয়ে থাকে তেমনি দন্ডপ্রাপ্তদের পরিবার প্রজন্মরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘৃনা, লজ্জায় আধমরা হয়ে যায়। পাশাপাশি তারা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে চির অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে যায়। তাই প্রতিটি দন্ডের পর কেউে কেউ অতিমাত্রায় উল্লাস আনন্দ প্রকাশ করলেও আমার নিকট তা খুব কষ্ট লাগে। আমার মতে দন্ডিত হওয়ার পর ফাঁসিতে ঝুলানো পিতার অস¦চ্ছল এতিমদেরদের রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে বিশেষভাবে বড় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে ভাল হতো। এসব ঘটনার জন্য শুধু বিকৃত চরিত্রের দন্ডিতরাই যে দায়ী তা কিন্তু নয়। এ দূঘটনার জন্য শুধু পুরুষরাই দায়ী । লালবাতি জ্বালানোর পরেও যদি দুটি ট্রেন বিপরীত মুখে চলে তাহলে কেন দূর্ঘনা ঘটবেনা? যেখানে অবিশ্বাস্য পুরুষের সংখ্যাধিক্য সেখানে লাবন্যময়ী একজন নারী পুরুষ সংগী ছাড়া একা যাতায়াত করার মতো পরিবেশ কি আছে ? হজ্জ পালনের মতো উত্তম কাজেও সিদ্ধপুরুষ ছাড়া নারীকে যেতে বারণ করা হয়েছে কেন? তা ছাড়া সকল ধর্মেইতো নারীদের একা চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে তার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই। সমস্যা হচ্ছে আমরা সতর্ক না হয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি। একজন যুবতী সূর্য ডোবার পরও পুরুষ ঘেষে একলা চলার মতো সুরুক্ষিত ব্যবস্থাপনা কি আমাদের আছে? একথা শোনার পর অতি প্রগতিশীল অনেকেই হয়তো লেখককে নারী বিরোধী আখ্যা দিবেন। ধর্ষক আইন অনুযায়ী সবোর্চ্চ শাস্তি পাবে তাই যৌক্তিক। দেশের অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটেছে, কিন্ত লোকচরিত্রের খুব বেশি উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করিনা। তাই একা নারীদের চলাচল নির্বিঘœ করার জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করা উচিত যার চালক হেলপার সবই নারী হতে পারে। ট্রেন বা অনুরুপ সার্ভিসের জন্য নারী পুলিশের পাহাড়ায় সংরক্ষিত কামরার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতিদিন প্রচুর মহিলা এখন আন্তঃজেলা যাতায়াত করে, তাই যাত্রী সংকট না হয়ে এটি অল্পদিনেই জনপ্রিয় হবে মনে করি। সবার আগে প্রয়োজন আমাদের একাকী চলাচলের ব্যপারে সচেতনতা। পাশাপাশি নাগরিকদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধের দীক্ষাও দেয়া দরকার। শুধু মৃত্যুদন্ড ধর্ষণ- হত্যাকান্ড প্রতিরোধে যথেষ্ট নয় তার বার বার প্রমানিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে একজন রূপার জন্য কয়েকটি পরিবারের দেয়া মূল্যও কিন্তু অনেক বেশি। রূপার পরিবার যেমন তাকে হারিয়ে কষ্ট পেয়ে অনুরুপ দোষিদের পরিবাও যে নিঃস্ব হচ্ছে তা কিন্তু কম বেদনার নয়।
লেখক: সহকারি অধ্যাপক ও সাংবাদিক
মোবাইল-০১৭১৯ ৬৪৪৯২৩
বাসাইলসংবাদ/একে