
বাসাইল সংবাদ: রোববার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭:

নিজস্ব প্রতিবেদক:
হুইল চেয়ারে বসেই প্রতিবন্ধী সম্রাট জয় করেছে জনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট। প্রতিবন্ধী জীবনে অদম্য উৎসাহ ও মনোবলে ভর করে আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দুর্গম পথ পারি দিয়ে সম্রাট ২০১৭ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-২.৯৩ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পড়াশোনায় অদম্য ইচ্ছা শক্তির বদৌলতে প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ঠেলে হুইল চেয়ারে বসেই শারীরিক প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী বাসাইল গোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। সম্রাট টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা টেঙ্গুরিয়াপাড়া আব্দুল্লাহেল বাকী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একই এলাকার চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান ও গৃহিনী শুকুরী বেগমের সন্তান।
জানা যায়, তার দু’টি পা-ই বিকল। তারপরেও সে হুইল চেয়ারে বসেই পরীক্ষায় অংশ নেয়। পা-বিকল, তো কি হয়েছে? প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে কখনো হামাগুড়ি কখনো হুইল চেয়ারে ভর করে মনের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়েই জীবন সংগ্রামের গন্তব্যে পৌছানোর জন্যই এ পরীক্ষায় অংশ নেয় সম্রাট ।
দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত সম্রাট জন্ম থেকেই শারিরীক প্রতিবন্ধি। শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ৮/১০জনের মতই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরী করার স্বপ্নও তার।
সম্রাট ২০১৪ সালের প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। হাবিবুর রহমানের চার সন্তান। দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় মেয়েও প্রতিবন্ধী।
তার এই প্রতিবন্ধী ছেলে সম্রাটকে কখনো পড়ালেখা করানোর কথা চিন্তাও করেনি। কিন্তু শৈশব থেকেই পড়ালেখার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তার। প্রবল ইচ্ছা শক্তি যে সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দূর্জয়কে জয় করা যায় তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সম্রাট।
সম্রাটের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়া করানোর খুব ইচ্ছা। আমি গরিব মানুষ পেটের ভাতই জোগাতে পারি না ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাব কিভাবে? তবে সরকারী-বেসরকারী ও বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে সম্রাটের জীবন। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাভাবিক শিশুদের মতোই চাকরী করার স্বপ্ন সম্রাটের।
হাবলা টেঙ্গুরিয়াপাড়া আব্দুল্লাহেল বাকী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আব্দুস সামাদ বলেন, সম্রাট প্রতিবন্ধী থাকলেও তার মনে অনেক জোর রয়েছে। হামাগুড়ি দিয়ে সম্রাট প্রায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতো। সে সমাপনী পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সম্রাট জেএসসিতেও জিপিএ- ২.৯৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সম্রাটকে স্কুল বিনা বেতনে পড়াচ্ছে। হুইল চেয়ারটিও স্কুল থেকে কিনে দেয়া হয়েছে।
বাসাইল উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী সম্রাটের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে । যা সম্রাট নিয়মিত পাচ্ছে।
বাসাইল সংবাদ/একে
সকলের অবগতির জন্য অনুগ্রহ পূর্বক নিউজটি শেয়ার করুন