বাসাইল সংবাদ: রোববার. ৯ অক্টোবর. ২০১৬:

বাসাইল সংবাদ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান জামিন নাকচ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
আজ রবিবার বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবিদন না মঞ্জুর করেন।
রানার পক্ষে শুনানি করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের প্রথম আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন রানা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গত ৬ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। টাঙ্গাইলের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন—আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন। আসামিদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির হোসেন আগেই গ্রেপ্তার হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন।
আসামি ফরিদ হোসেন কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। আর আসামি আবদুল হক পলাতক অবস্থায় কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহম্মদ হত্যা মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামের আরও একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন (২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি) সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা রাজাকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহম্মদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজপাড়ায় তার একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহম্মদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিকশা ছেড়ে ফারুক আহম্মদের রিকশায় ওঠেন এবং তাকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে রানা ও ফারুক আহম্মদের কথা হয়। রানা ফারুককে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফারুক এতে রাজি হননি। একপর্যায়ে ফারুক সেখান থেকে বের হলে সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। এ সময় অন্যরা তার মুখ চেপে ধরেন। ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রানার নির্দেশে সেখান থেকে রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় লাশ তুলে নেন রাজাসহ দুজন। তারা ফারুকের বাসার কাছে তার লাশ ফেলে চলে যান।
সুত্র-ঢাকাটাইমস
বাসাইল সংবাদ/একে