নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার জোকারচর এলাকায় নিউ ধলেশ্বরী নদী তীর ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর ক্রয়কৃত ম্যাজেস্টিকা ইন্টারন্যাশনালের ভূমির মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। এসব অবৈধ বালু কাটার ছবি ধারনের পর ফেরার পথে জোকাচর বাজারে গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে ইংরেজি দৈনিক ডেইলী নিউজ মেইলের জেলা প্রতিনিধি সুমন ঘোষের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় বালু ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম সাংবাদিকের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। এ বিষয়ে রাতেই সুমন ঘোষ বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়, স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মাসুদ রানা ও নুরুল ইসলামের (মেম্বার) নেতৃত্বে হাবিবুর রহমান, হাশেম, রফিক, ফরিদসহ আরও অনেকেই জোকারচর, গোহালিয়াবাড়ী ও কদিমহামজানী মৌজার নিউ ধলেশ্বরী নদীতীর ও পাশে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর প্রজেক্ট ম্যাজেস্টিকা ইন্টারন্যাশনালের জায়গা ধ্বসে যাওয়া অংশে মাটি ও বালু কেটে ৫০-৭০ ফুট গভীর করে ফেলেছে। ফলে আশপাশের নিউ ধলেশ্বরী নদীর বাম ও ডান তীরের গ্রামগুলোর বসতবাড়ী, ফসলি জমি এবং ম্যাজেস্টিকা ইন্টারন্যাশনালের ভরাটকৃত জায়গা বর্ষা মৌসুমে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খবর পেয়ে আলোকিত বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, ডেইলী অবজারভারের কালিহাতী প্রতিনিধি কামরুল হাসান মিঞা ও ডেইলী নিউজ মেইলের জেলা প্রতিনিধি সুমন ঘোষ সংশ্লিষ্ট তথ্য ও ছবি সংগ্রহে ওই এলাকায় যান। ছবি সংগ্রহকালে কামরুল হাসান মিঞার মুঠোফোনে বালু ব্যবসায়ী মাসুদ সরকার ফোন করে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। পরে সাংবাদিকরা ফেরার পথে জোকারচর বাজারের রাস্তায় পৌঁছালে বালু ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম মেম্বার ও তার ১০-১২ জন সহযোগী নিয়ে সুমন ঘোষের পথ রোধ করে। এসময় তারা অতর্কিতভাবে সাংবাদিক সুমন ঘোষের ওপর চড়াও হয়।এসময় কিল-ঘুষির এক পর্যায়ে বালু ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম মেম্বার গলা চেপে ধরে সুমন ঘোষকে শ্বাসরোধে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। সাথে থাকা সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
কদিমহামজানী গ্রামের নওজেস আলী, রিপন, শরীফুল, কুর্শাবেনুর কামরুল, বেলাল হোসেনসহ আরও অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বালু ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনাসহ নানা রকম হয়রানী ও মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। মূলত বালু ব্যবসায়ীরা উন্নয়নের কথা বলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু-মাটি উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এছাড়া নদী তীরের ওই স্থানগুলো দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা সরেজমিনে পরিদর্শনও করতে পারে না। তবে অধিকাংশ সময়ই প্রতিবাদকারীদের টাকার লোভ দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। যারা কথা না শোনে তাদেরকে ভিন্ন পন্থায় শায়েস্তা করা হয়।
ডেইলী নিউজ মেইলের জেলা প্রতিনিধি সুমন ঘোষ জানান, ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলনের ছবি তুলে ফেরার পথে নুরুল ইসলাম মেম্বার ও তার সহযোগীরা আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় তারা আর্থিক লেনদেনের মিথ্যা অপপ্রচারণা করে মূল ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছে।
ম্যাজেস্টিকা ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ জানান, তাদের প্রজেক্টের ১১৭ বিঘা জমির দক্ষিণাংশে প্রায় ৩০ ভাগ ভূমি ধসে পড়েছে। ওই স্থানের ধসে পড়া বালু মাটি বাধা দেওয়া সত্বেও স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মাসুদ ও নুরুল ইসলাম মেম্বাররা কেটে নিচ্ছে। এ বিষয়ে তারা বার বার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোন সুফল পায়নি। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
বালু ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। তবে নুরুল ইসলাম মেম্বার সাংবাদিক সুমন ঘোষের কাছে ধারের ২০ হাজার টাকা পাবে বলে দাবী করেন। টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়।
গোহালিয়াবাড়ী পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ জানান, হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। তিনি উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে ঘটনাটি মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন জানান, খননকৃত বালু উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটি দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। নিলামকৃত বালুর বাইরে থেকে কেউ বালু বা মাটি বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাসাইলসংবাদ, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ / একেবি
সকলের অবগতির জন্য নিউজটি শেয়ার করুন