নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের বাসাইলে সড়কের চেয়ে প্রায় দুই ফিট নিচু করে একটি কালভার্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ সড়কে যান চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জেলার বাসাইল-কালিহাতী উপজেলার গান্ধিনা ভায়া কাউলজানী সড়কের কাউলজানী উত্তরপাড়া এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।
জানা যায়, গত বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবল ¯্রােতে জেলার বাসাইল-কালিহাতী উপজেলার গান্ধিনা ভায়া কাউলজানী সড়কের কাউলজানী উত্তরপাড়া এলাকায় ব্যস্ততম সড়কের কালভার্টটি হেলে যায়। এরপর বাসাইল উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় কালভার্টটি নির্মাণে দরপত্র আহবান করে। পরে ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন মিটার লম্বা কালভার্টটি নির্মাণে মাশুক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। সম্প্রতি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তড়িৎগতিতে সড়ক থেকে প্রায় দুই ফিট নিচু রেখে কালভার্টটি নির্মাণ করে। সড়ক থেকে প্রায় দুই ফিট নিচু ও অ্যাপ্রোচে মাটি না দিয়েই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাতের আধারে পালিয়ে যায়। কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কালভার্টটি নির্মাণের অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দিয়ে জেলার বাসাইল, কালিহাতী, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। সড়ক থেকে নিচু করে কালভার্ট নির্মাণ করায় এ সড়কে যাতায়াতরত যানবাহন চালকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ সড়কের কালভার্ট এলাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ছোট যানবাহনগুলো পারাপার করতে হয়। ফলে যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী নেওয়াজ খান বলেন, ‘অপরিকল্পিভাবে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যস্ততম এই সড়কের কালভার্টটির নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি বিলের পানি প্রবেশ করে ও বের হয়। ওই সময় ব্যাপক স্রোতের সৃষ্টি হয়। মাত্র তিন মিটার কালভার্টটি নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে এটি ভেঙে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘সড়কের চেয়ে প্রায় দুই ফিট নিচু রেখে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও কালভার্টটির মুখ দেয়া হয়েছে বাড়ির দিকে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোত আরও বৃদ্ধি পাবে। এখানে মাত্র তিন মিটার কালভার্ট না দিয়ে আরও বড় কালভার্ট বা ব্রিজ নির্মাণ হলে ভালো হতো।’
শহীদুল ইসলাম নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘সড়কের চেয়ে প্রায় দুই ফিট নিচু করে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের চেয়ে নিচু থাকায় ওঠানামা করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। কালভার্ট এলাকায় গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটি দিয়ে জেলার বাসাইল, কালিহাতী, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এত ছোট কালভার্ট দেওয়া ঠিক হয়নি। আবার কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে সড়কের প্রায় দুই ফিট নিচু করে। এ কারণে যানচলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাশুক এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাসুরুল ইসলাম মাশুক সড়কের চেয়ে প্রায় দুই ফিট কালভার্ট নিচু থাকার বিষয়টি স্কীকার করে বলেন, ‘এলজিইডি অফিসের ড্রয়িং ও স্টিমেট অনুযায়ী কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে আমার কোনও দোষ নেই। এখন খোয়া ও বালু মিশিয়ে কালভার্টটির ওপরে কার্পেটিং করা হবে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচে মাটি দেয়া হবে। গত মাসে আমরা সেখান থেকে চলে এসেছি, তবে রাতের আধারে পালিয়ে নয়।’
বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে ওই সড়কের কালভার্টটি হেলে পড়েছিল। পরে নতুন করে ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যে তিন মিটার লম্বা কালভার্টটি নির্মাণের জন্য কাজটি পায় মাশুক এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা কাজটি করছে। এখনও কাজ শেষ হয়নি। সড়কের চেয়ে কালভার্টটি কিছু নিচু রয়েছে, তবে দুই ফিট হবে না। খুব দ্রুতই কালভার্টে খোয়া ও ইট দেওয়া হবে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচেও মাটি দেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখতেছি। কাজটি করছে, সেটা ফাইনাল দেখে তারপর বিল দেওয়া হবে। যদি কোন সমন্বয়হীনতা বা অপূর্ণতা থেকে থাকে তাহলে কাজটি ঠিকমত করে তারপর তারা বিল পাবে।’
বাসাইলসংবাদ/ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ /একেবি
সকলের অবগতির জন্য নিউজটি শেয়ার করুন