বাসাইলসংবাদ: রবিবার, ০৫ মে, ২০১৯:
নিজস্ব প্রতিবেদক, মির্জাপুর ॥ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ইটভাটা থেকে নির্গত উত্তপ্ত কালো ধোঁয়া ও তাপে প্রায় ২০একর জমির বোরো ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষকের অভিযোগ। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ধান ছাড়াও ভাটাসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন গাছ-পালার পাতা ঝরে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক বছর আগে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম ও তার আত্মীয় গাজীপুরের কড্ডা এলাকার রেজাউল করিম মিলে উপজেলার বহুরিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ায় আবাদি জমি ওপর এএনবি-২ নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করে। ভাটার তিন দিকে আবাদী জমি ও একপাশে নদী ঘেষা ওই এলাকায় ৭-৮ একর আবাদী জমি ভাড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই ভাটাটি চালু করা হয়। ওই সময় সচেতনমহল বাধা দিলেও স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা নিরব ভূমিকায় থাকায় তারা ইটভাটাটি স্থাপন করে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক বদর মুন্সী, মোসলেম উদ্দিন, মামুন, কদম মিয়া, তারা মিয়া, রহম আলী, করিম সিকদার, ঠান্ডু মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বোরোর আবাদ খুবই ভাল হয়েছিল। ১৫-২০ দিন পর ধান কাটাও শুরু হয়ে যাবে। কিন্ত গত ২৭ এপ্রিল সকালে হঠাৎ ভাটার কালো ধোঁয়া অতিরিক্ত ছাড়লে পুরো এলাকার জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও ভাটার আশপাশের বাড়ির গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। সারা বছরের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের সংসারটা খুবই কষ্টে যাবে বলে দাবি করেন তারা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপুরণ ও তিন ফসলী জমির ওপর স্থাপন করা ইটভাটা অপসারণের দাবি জানান।
স্থানীয়দের অভিযোগ- ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করার পর ভাটা মালিক ওই এলাকার কৃষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাশ্ববর্তী জমির মাটি কেটে নেয়া ও ধানক্ষেতের পাশের মাটি কেটে পুকুর তৈরি করে কৃষকদের নানাভাবে ক্ষতি করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজার তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ওই এলাকার প্রায় ১৬একর জমির ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭-৮ লাখ টাকা হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনে ওই এলাকায় ব্লক সুপারভাইজারকে পাঠানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইটভাটার মালিক আব্দুর রহিম কালো ধোঁয়ায় জমির ধান পুড়ে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান, কৃষি কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে বৈঠক করা হবে। কৃষকদের ক্ষতির পরিমান হিসেবে তাদেরকে টাকা দেওয়া হবে।’
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। ওই এলাকা পরিদর্শন করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও কৃষকরা যেন তাদের ক্ষতিপুরণ পায় তার ব্যবস্থাও করা হবে।’
বাসাইলসংবাদ/একেবি