নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন পত্রিকা ও টেলিভিশন জুরে শুধু ধর্ষণের খবরের ছড়াছড়ি। রাস্তায় পড়ে থাকা পাগলীও রেহাই পাচ্ছে না বিবেকহীন পুশুদের হাত থেকে। এমন সময় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান রনি। নাম-ঠিকানা অজানা মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়েকে দীর্ঘ ১১ বছর আদর যত্নে পালন করেন তিনি। ফেসবুকের কল্যাণে অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে মেয়েটির স্বামী ও তার ভাইদের হাতে তুলে দেন আসাদুজ্জামান রনি।
ওই মেয়েটির নাম দূর্গা রানী। তার স্বামীর নাম রমেশ। স্বামীর বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনী। আর বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনীতে।
জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মেয়েটিকে ২০১০ সালের দিকে জেলার নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে দেখা যায়। মেয়েটিকে স্থানীয় লোকজন নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলতে পারত না। ভারসাম্যহীন মেয়েটি যখন কোথাও আশ্রয় পাচ্ছিল না তখন মেয়েটি ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেই সময় মেয়েটির লালন পালনের দ্বায়িত্ব ভার স্বেচ্ছায় নিজের কাধে তুলে নেন ধুবড়িয়া বাজার বনিক সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান রনি। তিনি নাম পরিচয়হীন মেয়ের নাম দেন লাইলী। সেই সাথে মেয়েটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। সম্প্রতি তিনি মেয়েটির সন্ধ্যান চেয়ে ছবিসহ ফেসবুকের পোষ্ট দেন। ফেসবুকের কল্যাণে অবশেষে দীর্ঘ ১১বছর পর মেয়েটির পরিবারের সন্ধ্যান পান তিনি। পরে জানা যায় লাইলীর আসল নাম দূর্গা রানী। স্বামীর নাম রমেশ, বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনী। মেয়েটির বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনী।
দূর্গার আশ্রয়দাতা আসাদুজ্জামান রনি বলেন, ‘মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মেয়েটি যেন বাকি জীবনটা তার পরিবারের সাথে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারে।’ দূর্গার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে সকল প্রকার সাহায্য সহায়তা আশ^াসও দেন তিনি।
দূর্গা রানীর ভাই নাদিম হরিজন ও আরমান হরিজন বলেন, ‘প্রায় ১১ বছর স্বযতেœ লালন পালন করে আমাদের বোনকে আসাদুজ্জামান রনি ভাই ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের বোনকে ফিরে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। আজ কাল রনি ভাইয়ের মতো মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। রনি ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ফেসবুকে মেয়েটির ছবিসহ কয়েকজনে পোষ্ট করলে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। একপর্যায়ে হরিজন স¤প্রদায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে দূর্গা (লাইলী) কে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা যে কাজটি করতে পারিনি রনি তা করে দেখিয়েছে। মানবতা আজও বেঁচে আছে এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে।’
নাগরপুর থানার এএসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মেয়েটি তার পরিবারের সকলকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি।’
বাসাইলসংবাদ/ ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ /একেবি
সকলের অবগতির জন্য নিউজটি শেয়ার করুন